উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতির জন্য ঘুষের যোগান

ভারী মোটরযানের ভয়ঙ্কর লাইসেন্স জালিয়াতি চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএতে পর্ব-১

Passenger Voice    |    ০৪:১২ পিএম, ২০২২-১০-০৩


ভারী মোটরযানের ভয়ঙ্কর লাইসেন্স জালিয়াতি চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএতে পর্ব-১

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ বিআরটিএর ড্রাইভিং লাইসেন্স এমনিতে সোনার হরিণ, তার উপর একেবারে ভারী মোটরযান চালানোর লাইসেন্স সেটা তো হীরার চেয়েও দামী। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে লাইসেন্স প্রতি ১ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহন করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের ভারী মোটরযান চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চুয়াডাঙ্গা সার্কেল। চলতি বছরের মে ও জুন মাসের ৪ দিনে এই জাল জালিয়াতি করেন এই সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আইনুল হুদা। ৪৫ টি ভারী মোটরযান চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে ৪৫ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন করেছেন তিনি এমনটায় বলছে প্যাসেঞ্জার ভয়েসের অনুসন্ধান। 

প্যাসেঞ্জার ভয়েসের অনুসন্ধান টিমের হাতে এসেছে ভারী মোটরযানের জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করার বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত। সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আইনুল হুদার জাল জালিয়াতি করা ড্রাইভিং লাইসেন্স গুলোর রেফারেন্স নং- CHOD2736/05, CHOD5026/21, CHOD5019/2021, CHOD5018/2021, CHOD5014/21, CHOD5010/2021, CHOD5009/21, CHOD5004/21, CHOD5003/21, CHMC9G40196, CHMC9G40198, CHMC9G40195, VHMC9G40191, CHMC9G40192, CHMC9G40194, CHMC9G40199, CHMC9G40190, CHMC9G40186, CHOD3099/07, CHOD3747/07, CHMC9G40158, CHOD4942/2020, CHOD496/02, CHMC9G40185, CHOD3655/07, CHMC9H30026, CHOD2160/04, CHOD3465/2007, CHMC9G40200, CHOD4943/10, CHOD392/2021, CHMC9G40170, CHOD3982/07, CHMC9G40181, CHOD5006/21, CHOD3332/07, CHOD5030/2021, CHOD5029/2021, CHOD5027/21, CHOD5025/21, CHOD5012/2021, CHMC9G40188, CHMC9G40187, CHOD5007/21, CHOD5002/21, CHOD4850/2020, CHOD23149/07, CHOD2278/04, CHMC9H30029, CHMC9H30031, CHOD3267/07, CHOD0002998HML । আমাদের অনুসন্ধানে হাতে আসা তথ্য বলছে এই লাইসেন্স গুলোর বেশির ভাগ ব্যক্তির পূর্বের কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। ২০০৭/২০০৮ সালের পুরাতন ভলিয়মে তথ্য সংযোজন করে এই লাইসেন্স গুলো জালিয়াতি করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, CHMC9G40196 রেফারেন্সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ায় জনৈক আজিজুল হাকিম এর জন্ম তারিখ ০১-০২-১৯৯৬,  CHMC9G40190 রেফারেন্সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ায় জনৈক কিশোর দাস এর জন্ম তারিখ ০৬-০৯-১৯৯৬, CHMC9G40192 রেফারেন্সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ায় জনৈক মনির হোসেন এর জন্ম তারিখ ২৪-০৪-১৯৯৬, CHOD5003/21 রেফারেন্সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ায় জনৈক হাসনাত মাহমুদ জিহাদ এর জন্ম তারিখ ৩০-০৮-১৯৯৬, CHOD5010/2021 রেফারেন্সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ায় জনৈক মেহেদী হাসান এর জন্ম তারিখ ০৯-০৬-১৯৯৬, CHOD5009/21 রেফারেন্সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ায় জনৈক ইব্রাহিম খলিল এর জন্ম তারিখ ০৩-০৮-১৯৯৬,  CHOD5004/21 রেফারেন্সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ায় জনৈক আব্দুল আল আজিজ এর জন্ম তারিখ ০১-০২-১৯৯৪ । ২০০৭ সালে তাদের প্রথম ভারী মোটরযানের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করেছে বিআরটিএ। জন্ম তারিখ হিসাব করে দেখা যায় উক্ত ব্যক্তিদের নাবালক অবস্থায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে। 

সার্কেল অফিসের ভলিয়মের তথ্য মতে উক্ত ব্যক্তিদের বাড়ী চট্টগ্রাম জেলায়। ২০০৭ সালে এইসব ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু হয়ে থাকলে তাদের বয়স ১১ বছর থাকাকালিন সময়ে নাবালক অবস্থায় উক্ত ব্যক্তিরা কিভাবে চট্টগ্রাম থেকে চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ অফিসে এসে ভারী মোটরযানের লাইসেন্স ইস্যু করেছে সেটা অনুসন্ধান না করে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার মত এত অদক্ষ সহকারী পরিচালক নয় আইনুল হুদা। 

তবে সূত্র বলছে, আইনুল হুদার ক্যাশিয়ার জাকির হোসেন চট্টগ্রাম বন্দরের চাকরী প্রত্যাশি ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভারী লাইসেন্স প্রদান করার শর্তে প্রতিজন ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে গ্রহন করে। ১ লাখ টাকা সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আইনুল হুদাকে প্রদান করলেও বাকী টাকা মেরে দেয় জাকির হোসেন। উক্ত ব্যক্তিরা ভারী মোটরযানের লাইসেন্স গ্রহন করে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে অনেকে চাকরী করছে। 

সূত্র বলছে, সর্বশেষ বিআরটিএর সদর কার্যালয়ের ০৭-০৭-২০২২ খ্রিঃ তারিখের নম্বর-৩৫.০৩.০০০০.০১.০১২.০০৮.১৩-১১৯০ সংখ্যক স্বারকমূলে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ ) গণকে জ্যেষ্ঠতা ও কর্মদক্ষতার ভিক্তিতে গ্রেডেশন অনুযায়ী উপপরিচালক (ইঞ্জিঃ) পদে চলতি দায়িত্ব দিয়ে পদায়ন করে কর্তৃপক্ষ। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী বর্তমানে উপপরিচালক (ইঞ্জিঃ) পদে চলতি দায়িত্ব পাওয়ায় প্রথম লিষ্টে আছে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পার্কন চৌধুরী, ২য় স্থানে আছে তৌহিদুল ইসলাম তুষার এবং ৩য় স্থানে আছে সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী। মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে উপপরিচালকের পোষ্ট খালী আছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে, চট্টমেট্রো-২ সার্কেলে এবং রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে।  এদিকে “সাবেক চেয়ারম্যান মশিউরের দুর্নীতির দুর্গে সততার ছায়া,ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত পদোন্নতি দিচ্ছে বিআরটিএ”  এদিক থেকে পদোন্নতি পেতে ঘুষ লেনদেন হবে না বিষয়টি কিছুটা নিশ্চিত আইনুল হুদা। তবে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পার্কন চৌধুরী ও তৌহিদুল ইসলাম তুষারকে ডিঙিয়ে বিআরটিএ চট্টমেট্রো-২ সার্কেলের উপপরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর দায়িত্ব ভাগাতে বিভিন্ন তদবীরে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন করতে হচ্ছে তাকে। সেই টাকার যোগান দিতে বেপরোয়া হয়েছেন তিনি। ৪৫ টি জাল ভারী লাইসেন্স ইস্যু করে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন করেছেন চট্টমেট্রো-২ সার্কেলের উপপরিচালকের দায়িত্ব নিতে। এমনকি পদোন্নতি ও বদলীর জন্য মোটাদাগে চাপ সৃষ্টি করবে বিআরটিএর বর্তমান চেয়ারম্যান ও পরিচালক (প্রশাসন) কে এমনটা শোনা যাচ্ছে।